Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার পানিকচু

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার
পানিকচু

মোঃ আবদুর রহমান
কচু, আমাদের দেশে অপ্রচলিত সবজিগুলোর একটি। সবজি হিসেবে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কচুর ব্যবহার বেশ পুরানো।  একসময় এ সবজিটি বসতবাড়ির অনাবাদি পতিত জমিতে অযতেœ অবহেলায় চাষ হতো। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদার বিবেচনায় বৈচিত্র্যময় ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ফসলটি এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ফসলটি এখন অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। আগাগোড়া খাওয়া যায় এ সবজির পুষ্টিগুণ অবাক করার মতো। বর্ষার শেষে বাজারে যখন সবজির ঘাটতি দেখা দেয় তখন পানিকচুর লতি ও কা- বেশি বিক্রি হতে দেখা যায়। কচুর মূল উপাদান হলো আয়রন (ঋব), যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রেখে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে ৩৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ১৫ গ্রাম চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম আয়রন ও  ৫৬ মিলিগ্রাম খাদ্যশক্তি থাকে।
কচুর শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ,বি,সি, ক্যালসিয়াম ও লৌহ। ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্য রাতকানা প্রতিরোধ করে আর ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। কচুতে আছে আয়রন, যা রক্ত শূন্যতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যাদের রক্ত শূন্যতা আছে তারা নিয়মিত কচু খেলে উপকার পাবেন। কচুতে আছে নানা রকমের ভিটামিন যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য দারুণ উপকারী। কচুর ডাঁটায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, তাই গরমের সময় কচুর ডাঁটা রান্না করে খেলে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হয়। কচুর শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকে যা হজমে সহায়তা করে। কচুতে আছে প্রচুর ফাইবার, ফোলেট ও থায়ামিন যা মানব শরীরের জন্য অনেক দরকারী উপাদান। নিয়মিত কচু খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। কচুতে আছে অক্সলেট নামক উপাদান। তাই কচুশাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। কচুরমুখি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মূল্যবান খনিজ উপাদান রয়েছে। এসব উপাদান ভালো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা মানবদেহে রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করে। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের কচু না খাওয়াই ভালো।
উপযুক্ত জমি ও মাটি : পলি দোআঁশ ও এটেল মাটি পানি কচু চাষের জন্য উপযুক্ত। বন্যার ক্ষতি এড়াতে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে পানিকচুর চাষ করা যায়। তবে জমিতে সবসময় পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পানিকচুর জমিতে ৮ থেকে ১০ সেমি. পানি রাখতে হবে, এর বেশি হলে ফলনের উপর প্রভাব পড়ে সেইসাথে দাঁড়ানো পানি মাঝেমধ্যে নাড়িয়ে দিতে হবে। বর্ষায় অতিরিক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
জাত পরিচিতি : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) পানিকচুর বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। এগুলি হলো-
বারি পানিকচু-১ (লতিরাজ) : লতি লম্বায় ৯০-১০০ সেমি. সামান্য চেপ্টা , সবুজ। লতি সিদ্ধ করলে সমানভাবে সিদ্ধ এবং গলা  চুলকানি মুক্ত হয়। বোঁটা ও সংযোগস্থলের উপরিভাগের রং বেগুনি। জীবনকাল ১৮০-২৭০ দিন। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এর চাষাবাদ করা যায়।
বারি পানিকচু-২ : লতি লম্বায় প্রায় ১ মিটার, গোলাকার, অপেক্ষাকৃত মোটা ও গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ২৫-৩০ টন ও ১৮-২২ টন কান্ড পাওয়া যায়। লতি সমানভাবে সিদ্ধ হয় এবং গলা চুলকায় না।
বারি পানিকচু-৩ : প্রধানত কা-ই খাওয়া হয়। হেক্টর প্রতি ফলন কা- ২৫-৩০ টন এবং ১০-১২ টন লতি উৎপন্ন হয়। এটিও গলা চুলকানি মুক্ত।
বারি পানিকচু-৪ : গলা চুলকানি মুক্ত এ জাতের কচুর কা- মোটা ও গোলাপি বর্ণের হয়। রাইজোম গোলাপি বর্ণের ও ফ্লেস হালকা গোলাপি। হেক্টর প্রতি কা- ৩৫-৪৫ টন ও লতি ৫-৮ টন পাওয়া যায়।
বারি পানিকচু-৫ : এ জাতের কচুর রাইজোম হালকা সবুজ বর্ণের ও ফ্লেস হালকা সাদাটে। প্রধানত রাইজোমই খাওয়া হয়। হেক্টর প্রতি কা- ৩৫-৪০ টন ও লতি ৫-৮ টন উৎপন্ন হয়। এটি খেলেও গলা চুলকায় না।
বারি পানিকচু-৬ : এ কচুর রাইজোম ১ মিটার লম্বা ও ৩০-৩৫ সে.মি গোলাকার হয় এবং হালকা সবুজ বর্ণের হয়। এর শাঁস আকর্ষণীয় সাদা। হেক্টর প্রতি কা- ৮০-৯০ টন ও লতি ৬-৭ টন উৎপন্ন হয়।
চারা রোপণ : আগাম ফসলের জন্য কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর)। নাবী ফসলের জন্য মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল) মাসে লাগানো যায়। দক্ষিণাঞ্চলে বছরের যে কোন সময় লাগানো যায়। প্রতি শতকে প্রায় ১৫০টি লতা রোপনের জন্য প্রয়োজন। জমি ভালোভাবে তৈরি করে লাইন থেকে লাইন ২ ফুট ( ৬০ সেমি.) এবং গাছ থেকে গাছ ১.৫ ফুট (৪৫ সেমি.) রাখতে হবে। 
পানি কচুর চারা রোপণের আগে এর সব পাতা,শিকড় ও কা-ের তলার কিছু অংশ কেটে ফেলতে হবে। এর ফলে চারা দ্রুত মাটিতে লেগে যায়। জমি কাদাময় না হলে রোপণের পরপরই পানি সেচের ব্যবস্থা করা দরকার। দেশের যেসব এলাকায় বন্যার সম্ভাবনা থাকে সেখানে কার্তিক মাসের মধ্যে চারা লাগানো ভালো, এর ফলে বন্যার আগেই ফসল তোলা সম্ভব হয়।
সার ব্যবস্থাপনা
ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম; এমওপি ৭৫০ গ্রাম; গোবর ৫০ কেজি; (প্রতি শতকে)।            
গোবর, টিএসপি এবং এমওপি সার জমি তৈরির শেষ সময়ে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। তবে প্রথম কিস্তি রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
পানি কচুর গোড়ায় দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে এবং দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে হবে।
লাতিরাজ জাতের জন্য দাঁড়ানো পানির গভীরতা ৮-১০ সেমি. হওয়া দরকার।
পানিকচুর রোগ ব্যবস্থাপনা : কচু পাতা ঝলসানো (মড়ক) রোগের আক্রমণে পাতা পচে যায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ রোগের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা প্রথমে ছোট ছোট কালো দাগ দেখা যায়, যা পরে বেগুনি থেকে বাদামী রঙে পরিণত হয়। পরবর্তীতে এ সমস্ত দাগ আকারে বেড়ে একত্র হয়ে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা ঝলসে যায়। পরে তা কচু ও কা-ে বিস্তার লাভ করে ও পচে যায়।
অনুকূল পরিবেশ
উচ্চ তাপমাত্রা, আর্দ্র আবহাওয়া ও পর পর ৩-৪ দিন বৃষ্টি থাকলে এ রোগের মাত্রা খুব বেড়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা : এ রোগটি বীজবাহিত হওয়ায় রোগমুক্ত এলাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। রোগ দেখা মাত্র ডায়থেন এম-৪৫ বা রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম, ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ৩ থেকে ৪  বার স্প্রে করতে হবে। প্রয়োগ করার আগে ট্রিকস মিশিয়ে নিতে হয়।
লিফ স্পট বা পাতায় দাগ পড়া রোগ : এটি ছত্রাকজনিত রোগ। এর আক্রমণে কচুপাতায় শুকনো ও মাঝারি আকারের দাগ পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে সম্পূর্ণ গাছই পুড়ে যায় ও উৎপাদনের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
দমন ব্যবস্থা : সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত চারা রোপন ও ফসল আবাদে শস্য পর্যায় অনুসরণ করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে টিল্ট ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
গোড়া পচা রোগ : ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগটি হয়ে থাকে। এ রোগের আক্রমণে গাছের গোড়ায় ছত্রাকের সাদা মাইসোলিয়াম দেখা যায়, যা পরবর্তীতে গাছটি সম্পূর্ণভাবে হলুদ হয়ে ঢলে পড়ে।
দমন ব্যবস্থা : রোগমুক্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ক্ষেতের পানি সরিয়ে অনুমোদিত বালাইনাশক বেভিস্টিন ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক প্রয়োগের একদিন পর জমিতে আবার পানি দেয়া যাবে।
কচুর পোকা মাকড় :
কচুর লাল মাকড় : কচুর পাতার নীচে লাল রঙের জমাট বাঁধা পোকার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো আসলে মাকড় ,যা খালি চোখে বিছিন্ন আকারে দেখা যায় না। এর পূর্ণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয়ই কচুর ক্ষতি করে থাকে।
দমন ব্যবস্থা : কচুর লাল মাকড় দমনের জন্য মাকড়নাশক ভার্টিমেক ১.৮ ইসি, ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
জাব পোকা : এ পোকা কচু থেকে রস শোষণ করে এবং ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে ফসলের ক্ষতি করে থাকে।
দমন ব্যবস্থা : এ পোকা দমনের জন্য হলুদ স্টিকার ক্ষেতের মাঝে মাঝে দিলে উপকার পাওয়া যায়। আক্রমণ বেড়ে গেলে এডমায়ার ১০০ এসপি ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করার ব্যবস্থা করতে হবে।
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, কচুপাতায় ছত্রাক বা কীটনাশক প্রয়োগের সময় ডিটারজেন্ট বা গুঁড়ো সাবান ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে, নতুবা বালাইনাশক বা কীটনাশক গড়িয়ে পড়ে যাবে।
ফলন( টন/হেক্টর)  লতি : ২৫-৩০; কা- : ১৮-২০
ফসল সংগ্রহ : রোপণের ২ মাস পর থেকে ৭ মাস পর্যন্ত লতি সংগ্রহ করা যায়।
উৎপাদন খরচ ও ঝুঁকি কম, আর লাভ বেশি হওয়ায় কচু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। রবি মৌসুমে জানুয়ারিতে কচুর কন্দ জমিতে রোপণের পর মে মাসেই তা বাজারজাত করা যায়। পানিকচুর চাষ বৃদ্ধি করা হলে প্রতি ইঞ্চি জমি সর্বোত্তম ব্যবহার হবে। নিচু প্রকৃতির জমি আবাদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি জৈব কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করা যায়।

লেখক : এআইসিও, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক কার্যালয়, খুলনা। মোবাইল : ০১৯৪৩-৫১৭৫০৬। ই-মেইল : rahmankhulna00@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon